শাহীন মাহমুদ রাসেল, কক্সবাজার :: রামু উপজেলার ফঁতেখারকুল ও চাকমারকুল সীমান্তবর্তী তেচ্ছিপুল এলাকার ফারিকুল গ্রামটি এখন মাদকের ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। তেচ্ছিপুলের মাঝখান থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক এবং দক্ষিণে সড়ক ও বাঁকখালী নৌপথে পাশ্ববর্তী সদর উপজেলার সঙ্গে যুক্ত থাকায় ভৌগোলিক সুবিধার কারণেই এখানে বিস্তার ঘটেছে মাদকের।
উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এখানে পুলিশ অভিযান চালালেও তার আগেই খবর পেয়ে সটকে পড়ে অপরাধীরা। ফলে তেচ্ছিপুল এলাকার মাদক নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে রামু থানা পুলিশও।
সরজমিন স্থানীয় বাসিন্দা এবং পুলিশের তালিকা সূত্রে জানা যায়, তেচ্ছিপুল গ্রামের ৫ ব্যবসায়ীর একটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে পুরো এলাকার মাদক ব্যবসা। এরাই তেচ্ছিপুল এলাকায় পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য।
সেবনকারীদের হাতে মাদক নিরাপদে পৌঁছে দেয়ার জন্য এদের প্রত্যেকের রয়েছে ৪/৫ জন করে উঠতি বয়সের বিশ্বস্ত এজেন্ট তথা সরবরাহকারী। মোবাইলে যোগাযোগ করে তারা চাহিদামতো পৌঁছে দেয় ইয়াবা। সারাদিন টুকটাক বিক্রি হলেও মূলত বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে মূল বেচাকেনা।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের তেচ্ছিপুল থেকে একদিকে লম্বরীপাড়া হয়ে বাঁকখালী এবং অপরদিকে ফারিকুল দিয়ে জারাইলতলী পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাদকের ওই হাট বসে। দূর-দূরান্ত থেকেও মাদকসেবী ক্রেতারা মোটরসাইকেল নিয়ে এসে ভিড় জমায় তেচ্ছিপুল ফারিকুল সড়কের দুই প্রান্তের ওই এলাকায়।
বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কলঘর বাজার ও তেচ্ছিপুল স্টেশনে বাজার করতে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে মিশে যায় মাদকের ক্রেতা-বিক্রেতারা। ফলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছেও তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তেচ্ছিপুল গ্রামের ৫ মাদক ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রণ করছে ফঁতেখারকুল ইউনিয়নের মাদক ব্যবসা। এদের মধ্যে মৌলভী ছিদ্দিক আহাম্মদের ছেলে শীর্ষ মাদক সম্রাট আমিনুল ইসলামকে কয়েকবার রামু থানা হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেও পরে রহস্যজনক কারণে ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তারমধ্যে মৃত গোলাম কবিরের ছেলে মুফিজ, মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে আব্দুল কাদের, মোজাফফর আহাম্মদের ছেলে নজিবুল আলম ও মৃত ইসলাম ড্রাইভারের ছেলে কায়ছার মুলত এই চার জনই তেচ্ছিপুল এলাকার মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করে বলে স্থানীরা জানায়। তবে ওই চিহ্নিত ৫ মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের হাতে কয়েকবার আটক হলেও রহস্যজনক করণে থানা থেকে বেরিয়ে আবার তাদের ব্যবসা শুরু করে এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।
তাছাড়া দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেও ধরাছোঁয়ার বাইরে চিহ্নিত ওই মাদক ব্যবসায়ীরা। আগে প্রকাশ্যে মাদকের কেনাবেচা হলেও এখন মাদক সরবরাহে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুদের। এদের প্রত্যের নিজ বাড়ী যেন জলসা ঘর, সন্ধ্যা নামলেই, কখনো বা দিনে-দুপুরেও বসে জমজমাট আসর। সেখানে গিয়ে মদ, আর জুয়ায় মত্ত থাকেন অনেক হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিও। এলাকাবাসী মাদক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে মুখ খুলতেও সাহস করছেন না। অদৃশ্য বড় ভাইদের ছত্রচ্ছায়ায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চিহ্নিত এসব মাদক ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন সময় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও আশানুরূপ ফল মেলেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ফঁতেখারকুল এবং চাকমারকুল ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা মাদকের ছোবলে আক্রান্ত। মাদকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে যুবক ও এলাকাবাসীদের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মাদকের বিস্তার রোধ করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তারা। কিছু এলাকায় ইতোমধ্যে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে মাদকসহ পুলিশ হাতেনাতে ধরে নিয়ে গেলেও রাতে থানা থেকে ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন জনপ্রতিনিধিরা।
এই এলাকার সন্ত্রাস, নাশকতা ও মাদক প্রতিরোধ কমিটির নেতারা জানান, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এখন আমরা এবং আমাদের পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছি। মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট প্রতিনিয়ত আমাদেরকে হত্যার হুমকি ও নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
রামু থানার ওসি আবুল খাইর বলেন, তেচ্ছিপুল এলাকায় মাদকের কিছুটা বিস্তার লাভ করেছে। তবে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছে রামু থানা পুলিশ। তেচ্ছিপুলসহ রামু থানা এলাকার বিভিন্ন স্পটে সন্ত্রাস আর মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালিত হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
পাঠকের মতামত: